ইস্তিগফার : গুনাহ মোচনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম

ছবি : প্রতীকী
Spread the love

আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত দয়ালু ও ক্ষমাশীল। বান্দা যখন তার দরজায় এসে ইস্তিগফারের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন আল্লাহ তাআলা দয়া করে তার গুনাহগুলো মাফ করে দেন। ইস্তিগফার শুধু ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যম নয়, বরং এটি একজন মুমিনের জন্য আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথও বটে।

ইস্তিগফার অর্থ ও গুরুত্ব
‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ অর্থাৎ ‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বহু গুনাহ করে ফেলি। একটি আস্তাগফিরুল্লাহ উচ্চারণে একটি গুনাহ মোচন হয়ে যেতে পারে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) প্রতি ফরজ নামাজের পরে ইস্তিগফার পাঠ করতেন এবং প্রতিদিন বহুবার তাওবা করতেন।

তিনি ইরশাদ করেছেন-

‘হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের প্রভুর নিকট তাওবা করো এবং তার কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয়ই আমি প্রতিদিন একশতবার তাওবা করি।’ (নাসাঈ)

ইস্তিগফারের কিছু দোয়া ও আমল
১. أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহ
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
আমল: প্রতিদিন যেকোনো সময় অন্তত ৭০-১০০ বার পাঠ করা উত্তম।

২. أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাযি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম, ওয়া আতুবু ইলাইহি
অর্থ: আমি সেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং আমি তাঁরই দিকে ফিরে আসি।
ফজিলত: এ দোয়াটি পড়লে, যদি কেউ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারীও হয়, তবুও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। (আবু দাউদ)

أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসি।
আমল: প্রিয় নবী (সা.) প্রতিদিন ৭০ বারের বেশি এই দোয়াটি পড়তেন। (বুখারি)

সায়্যিদুল ইস্তিগফার (শ্রেষ্ঠ ইস্তিগফার)

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي…
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমিই আমার রব… (সম্পূর্ণ দোয়াটি উপরের পাঠে দেওয়া আছে)
আমল: সকাল ও সন্ধ্যায় পাঠ করলে, মৃত্যুর পূর্বে পাঠকারীর জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (বুখারি)

রাব্বিগ্ ফিরলি দোয়া

رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ…
উচ্চারণ: রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্য
অর্থ: হে আমার রব! তুমি আমাকে ক্ষমা করো এবং আমার তাওবা কবুল করো।
আমল: রাসুল (সা.) এক বৈঠকে ১০০ বার এই দোয়াটি পাঠ করতেন। (আবু দাউদ, তিরমিজি)

ইস্তিগফারের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসসমূহ
দুশ্চিন্তার মুক্তি:
রাসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি সবসময় ইস্তিগফার পড়ে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য প্রতিটি কষ্ট থেকে মুক্তির পথ, প্রতিটি দুশ্চিন্তার থেকে রাহাত এবং অপ্রত্যাশিত রিজিকের দরজা খুলে দেন।” (আবু দাউদ)

আল্লাহর ক্ষমার ওয়াদা:
নবী করিম (সা.) বলেন, “যখন কোনো বান্দা গোনাহ করে বলে, ‘হে আল্লাহ! আমি পাপ করেছি, আমাকে ক্ষমা করো।’ তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দা জানে, আমি গুনাহ মাফও করি এবং পাকড়াওও করি। তাই আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।’” (বুখারি ও মুসলিম)

বিশেষ ফজিলত শুক্রবার ফজরের আগে:
যে ব্যক্তি শুক্রবার ফজরের নামাজের আগে ৩ বার বলে-

আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি
তার গোনাহ সমুদ্রের ফেনা সমান হলেও আল্লাহ তা ক্ষমা করে দেন।

ইস্তিগফারের ফলাফল
গুনাহ মাফ হয়

অন্তরে প্রশান্তি আসে

রিজিক বৃদ্ধি পায়

বিপদ থেকে রক্ষা মেলে

আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়

শেষ কথা: ইস্তিগফার শুধু একটি দোয়া নয়, বরং এটি বান্দার জীবনের প্রতিদিনের প্রয়োজন। আসুন, আমরা নিজেরা নিয়মিত ইস্তিগফার করি এবং আমাদের প্রিয়জনদেরও এ উত্তম আমলে উৎসাহিত করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওবাহ ও ইস্তিগফারকারী বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।

Check Also

দোয়া মাসুরা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ

Spread the loveআল্লাহর নিকট থেকে সাহায্য পাওয়ার জন্য তার কাছে ক্ষমা চাওয়া, ধরনা দেওয়া কিংবা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *