গত এক মাসে সারাদেশে ৪৮ হাজার ৪০০ জন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। অর্থাৎ, দিনে গড়ে প্রায় ১,৫৬০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন—যা পূর্বের আলোচিত ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর গড় গ্রেপ্তারের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩১ দিনে এ গ্রেপ্তার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১,৩৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার হয় ১০ মে, একদিনেই ২,৭৭১ জনকে আটক করা হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের দেশত্যাগের পরপরই রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে গ্রেপ্তারের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যায়।
আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ ঘোষণার পর অভিযান তীব্র হয়
১২ মে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান-সম্পর্কিত হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও এর গোয়েন্দা শাখা গত এক মাসে ১৭৫ জনের বেশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে আছেন সাবেক সংসদ সদস্যরা। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকেও ৯ মে নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রাজধানীর বাইরেও দলটির ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের গ্রেপ্তারে তৎপর রয়েছে পুলিশ। খুলনা, কিশোরগঞ্জ, যশোর, শরীয়তপুর, কুমিল্লা ও বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় ছাত্রলীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের ঝটিকা মিছিল হয়েছে।
ডিএমপি জানিয়েছে, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও তাদের সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ঝটিকা মিছিল করে এবং সেই ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এসব চিত্র দেখে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
১৮ মে গুলিস্তানের একটি মিছিল থেকে ১১ জনকে, এবং ১৯ মে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আরও ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রাজনৈতিক গ্রেপ্তারের পাশাপাশি, মোহাম্মদপুর থানার রায়েরবাজারে বিশেষ অভিযানে ৪৪ জনকে আটক করা হয়, যাদের মধ্যে ছিলেন মাদক কারবারি, ছিনতাইকারী এবং ওয়ারেন্টভুক্ত গ্যাং সদস্যরা।
কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) জান্নাত-উল-ফরহাদ জানান, গ্রেপ্তার বাড়লেও জামিনে ছাড়া পাওয়া আসামির সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মোট বন্দির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে।
তবে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, সেখানে বন্দির সংখ্যা বাড়ছে। গত মাসে যেখানে বন্দি ছিল সাড়ে চার হাজার, এখন তা বেড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (অপারেশন) শাহজাদা মো. আসাদুজ্জামান দাবি করেন, গ্রেপ্তার বৃদ্ধির পেছনে কোনো নির্দিষ্ট কারণ নয়, বরং পুলিশের সক্রিয়তাই মূল কারণ। তিনি বলেন, “নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের সদস্যরা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, তাই গ্রেপ্তারও বেড়েছে।”
এর আগে, ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত ৩০ দিনে ৩০ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এর মধ্যে ১২ হাজার ৫০০ জন ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর আওতায় গ্রেপ্তার হন।