কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জেরে শুরু হওয়া ভারত-পাকিস্তানের কূটনৈতিক উত্তেজনা এখন সরাসরি সামরিক সংঘাতে রূপ নিয়েছে। এর সূচনা হয় মঙ্গলবার (৬ মে) মধ্যরাতে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে। এরপর পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণ, ড্রোন হামলা ও যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের মতো ঘটনাও ঘটে।
এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার (৮ মে) আলোচনায় আসে ইসরায়েলের তৈরি ‘হ্যারোপ’ নামে একটি আত্মঘাতী ড্রোন, যা পাকিস্তানভূমিতে ভারতীয় আক্রমণের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অভিযোগ ও পাল্টা প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দাবি, করাচি, লাহোরসহ একাধিক শহরে ভারত ড্রোন হামলা চালিয়েছে এবং আকাশসীমায় ভারতীয় ড্রোন পাঠানোর ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানান, তারা যেসব ড্রোন ভূপাতিত করেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলি তৈরি ‘হ্যারোপ’ ড্রোন, যা মূলত আত্মঘাতী হামলায় ব্যবহৃত হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ বিশ্লেষণ করে ‘হেরন এমকে-২’ মডেল ইউএভি ব্যবহারেরও প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা ইসরায়েলি প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
হ্যারোপ ড্রোন: আত্মঘাতী আকাশযুদ্ধের অস্ত্র
‘হ্যারোপ’ ড্রোনকে বলা হয় আধুনিক যুদ্ধে ‘উড়ন্ত বোমা’। এটি ৩৫,০০০ ফুট উচ্চতায় উড়তে পারে এবং লক্ষ্যবস্তুর ওপর গিয়ে নিজেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তা ধ্বংস করে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান IAI (Israel Aerospace Industries) এই ড্রোনকে “যুদ্ধক্ষেত্রের রাজা” হিসেবে বর্ণনা করে।
এই ড্রোনের বৈশিষ্ট্য:
৯ ঘণ্টা পর্যন্ত আকাশে ভেসে থেকে শত্রু খোঁজা
স্বয়ংক্রিয়ভাবে শত্রু শনাক্ত ও আক্রমণের রুট নির্ধারণ
রাডার, কমান্ড পোস্ট, ট্যাঙ্কসহ উচ্চ-মূল্যের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা
ইঞ্জিন নির্মাণে যুক্ত রয়েছে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান UAV Engines Ltd.
পাল্টা প্রতিরোধে পাকিস্তানের অবস্থান
পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারতের এসব হামলায় তারা সামান্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বরং বেশ কয়েকটি ড্রোন তারা ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, সফট-কিল (ইলেকট্রনিক) এবং হার্ড-কিল (অস্ত্রভিত্তিক) পদ্ধতির সমন্বয়ে তারা সব আক্রমণ ঠেকাচ্ছে।
আইএসপিআর-এর ভাষ্য অনুযায়ী, এই কাপুরুষোচিত হামলা নয়াদিল্লির কৌশলগত বিভ্রান্তি ও হতাশার প্রতিফলন, এবং ভারত এলওসি-তে উল্লেখযোগ্য ক্ষতির মুখে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ অব্যাহত
এই ঘটনার মধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্বেগ বেড়েছে। আগেই জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীন দুই দেশকে আত্মসংযম ও আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। তবে সামরিক উত্তেজনার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়া এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।