ফুলশয্যার রাতে স্বামীর মৃত্যু

Spread the love

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় একটি মর্মান্তিক ঘটনায় ফুলশয্যার রাতেই স্বামীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন নববধূ লাভলী আক্তার (২১)। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় রাতটি তার জন্য দুঃখ আর অশ্রুর রাতে পরিণত হয়েছে।

মেহেদী মাখা হাত আর লাল শাড়িতে সেজে অপেক্ষারত লাভলী স্বপ্ন দেখছিলেন নতুন জীবনের, কিন্তু মুহূর্তেই সেই স্বপ্ন ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১ মে ২০২৫) দুপুরে ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের কবিরমামুদ গ্রামের শাহ জামালের মেয়ে লাভলী আক্তারের সঙ্গে একই উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের আছিয়ার বাজার এলাকার মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে খালেকুজ্জামান ডিউটের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে সারাদিন দুই পরিবারের আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যে আনন্দ-উৎসব চলছিল। খাওয়া-দাওয়া ও হাসি-উল্লাসের মধ্য দিয়ে দিনটি কেটে যায়।

রাত ১২টার দিকে খালেকুজ্জামান বাসর ঘরে প্রবেশ করেন। লাল শাড়িতে সজ্জিত লাভলী তখন মেহেদী মাখা হাতে বরের অপেক্ষায় ছিলেন। বর এক গ্লাস পানি চান এবং হঠাৎ চিৎকার করে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। লাভলীর আত্মচিৎকারে বাড়ির লোকজন ছুটে এসে দেখেন, খালেকুজ্জামান আর সাড়া দিচ্ছেন না। স্থানীয় চিকিৎসকের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।

লাভলী আক্তার স্বামীর মৃত্যুর ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। ফুলশয্যার রাতে স্বামীর মরদেহের পাশে বসে অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি পুরো রাত কাটিয়েছেন। শুক্রবার (২ মে) বিকেলে মেহেদী মাখা হাত, লাল শাড়ি আর অপলক দৃষ্টিতে তিনি শেষবারের মতো স্বামীকে বিদায় জানান। এ দৃশ্য গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া ফেলেছে।

নববধূর চাচা ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য শাহ আলম জানান, খালেকুজ্জামান ডিউট পেশায় একজন প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি প্রায় ১৮ বছর আগে জান্নাতি আক্তার মুক্তার সঙ্গে প্রথম বিয়ে করেছিলেন। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তিনি লাভলী আক্তারের সঙ্গে বিয়ে করেন। শাহ আলম বলেন, “কে জানতো বিয়ের রাতেই জামাইয়ের মৃত্যু হবে। অল্প বয়সে আমার ভাতিজি বিধবা হলো। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, সবই নিয়তির খেলা।”

শিমুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম মিয়া শোহেল খালেকুজ্জামানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “নিয়তির ওপরে কারো হাত নেই। তবে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা খুবই কম দেখা যায়। বাসর রাতেই স্ত্রী বিধবা! এটি অত্যন্ত কষ্টদায়ক।” শুক্রবার বিকেল ৩টায় পারিবারিক কবরস্থানে খালেকুজ্জামানের দাফন সম্পন্ন হয়।

এ ঘটনা শুধু লাভলী আক্তার ও তার পরিবারের জন্যই নয়, পুরো সমাজের জন্য একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। জীবনের এমন অপ্রত্যাশিত মোড় কারো কল্পনাতেও ছিল না। লাভলীর এই শোক কাটিয়ে ওঠার জন্য সমাজের সবার সহযোগিতা ও সমবেদনা প্রয়োজন। এ ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, জীবন কতটা অনিশ্চিত এবং কখন কী ঘটে তা কেউ জানে না।

Check Also

রাস্তায় ফেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীকে মারধর

Spread the loveফরিদপুরের নগরকান্দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী ও সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী বৈশাখী ইসলাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *