বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন, যেখানে দুটি মনের মিলন ঘটে। মুসলিম বিবাহে ‘কবুল’ বলা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা বর ও কনের সম্মতি প্রকাশ করে। কিন্তু যারা বাকশক্তিহীন বা বোবা, তারা কীভাবে এই ‘কবুল’ বলবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে ইসলামী শরিয়াহ এবং বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে সুন্দর ও বাস্তবসম্মত সমাধান রয়েছে।
শরিয়াহর দৃষ্টিকোণ
ইসলামী শরিয়াহতে বিবাহের জন্য মৌখিক সম্মতি (কবুল) প্রকাশ করা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, যারা বাকশক্তিহীন, তাদের জন্য বিকল্প পদ্ধতির অনুমোদন রয়েছে। ইসলামী আলেমদের মতে, বোবা ব্যক্তি ইশারা, লিখিত সম্মতি বা অন্য কোনো স্পষ্ট অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তাদের সম্মতি জানাতে পারেন। এই সম্মতি অবশ্যই স্বেচ্ছায় এবং সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে।
- ইশারার মাধ্যমে সম্মতি: বোবা ব্যক্তি হাতের ইশারা, মাথা নাড়া বা অন্য কোনো শারীরিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে ‘কবুল’ প্রকাশ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, কাজি বা বিবাহপরিচালক প্রশ্ন করলে তিনি মাথা নেড়ে বা হাত তুলে সম্মতি জানাতে পারেন।
- লিখিত সম্মতি: যদি ব্যক্তি লিখতে সক্ষম হন, তবে তিনি কাগজে ‘কবুল’ বা সম্মতির কথা লিখে প্রকাশ করতে পারেন। এটি বিবাহের আনুষ্ঠানিকতায় গ্রহণযোগ্য।
- সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ: যারা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে পারদর্শী, তারা এই ভাষার মাধ্যমে তাদের সম্মতি জানাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে একজন দোভাষী থাকলে বিষয়টি আরও সহজ হয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে বোবা ব্যক্তিদের বিবাহের ক্ষেত্রে সাধারণত কাজি বা বিবাহপরিচালককে আগে থেকে জানিয়ে রাখা হয় যে বর বা কনে বাকশক্তিহীন। এরপর কাজি তাদের সুবিধা অনুযায়ী সম্মতি প্রকাশের পদ্ধতি নির্ধারণ করেন। গ্রামাঞ্চলে সাধারণত ইশারা বা মাথা নাড়ার মাধ্যমে সম্মতি গ্রহণ করা হয়, আর শহুরে এলাকায় লিখিত সম্মতি বা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের ব্যবহার বেশি দেখা যায়।
সমাজে সচেতনতা ও সংবেদনশীলতা
বোবা ব্যক্তিদের বিবাহে সম্মতি প্রকাশের বিষয়টি নিয়ে সমাজে এখনও কিছু কুসংস্কার বা অজ্ঞতা থাকতে পারে। তাই পরিবার, কাজি এবং অতিথিদের এ বিষয়ে সংবেদনশীল হওয়া জরুরি। বিশেষ করে:
- বিবাহের আগে পরিবারের সঙ্গে কাজির আলোচনা করে সম্মতি প্রকাশের পদ্ধতি চূড়ান্ত করা।
- বোবা ব্যক্তির ইচ্ছা ও স্বাচ্ছন্দ্যকে প্রাধান্য দেওয়া।
- সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ দোভাষীর সহায়তা নেওয়া, যদি প্রয়োজন হয়।
একটি বাস্তব উদাহরণ
গত বছর ঢাকার একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে বোবা কনে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে কাজির প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি একজন দোভাষীর সহায়তায় ‘কবুল’ বলেন এবং তার সম্মতি স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেন। এই ঘটনা উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে এবং সমাজে একটি ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দেয়।
বোবা ব্যক্তিদের জন্য ‘কবুল’ বলার ক্ষেত্রে শরিয়াহ এবং সমাজ ব্যবস্থা যথেষ্ট নমনীয়। ইশারা, লিখিত সম্মতি বা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে তারা তাদের মনের কথা প্রকাশ করতে পারেন। এই প্রক্রিয়ায় পরিবার, সমাজ এবং বিবাহপরিচালকদের সহযোগিতা ও সংবেদনশীলতা এই পবিত্র বন্ধনকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারে।