মই বেয়ে উঠতে হয় অর্ধকোটি টাকার সেতুতে

Spread the love

ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার সুবিদপুর ও কুশঙ্গল ইউনিয়নের মানুষ একটি নতুন সেতুর সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত। প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে নির্মিত এই সেতুর দুই পাশের অ্যাপ্রোচে বালি ভরাট ও সংযোগ সড়কের কাজ না হওয়ায় জনসাধারণকে বাঁশের মই ও সাঁকো ব্যবহার করে সেতু পার হতে হচ্ছে। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ পথচারীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

সেতুর বিবরণ ও অবস্থান

  • অবস্থান: সুবিদপুর ইউনিয়নের মজকুনী গ্রামে বাইতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে।
  • সংযোগ: সুবিদপুর ইউনিয়নের বাইতারা ও কুশঙ্গল ইউনিয়নের সরমহল গ্রামকে যুক্ত করেছে।
  • নির্মাণ ব্যয়: প্রায় ৪০ লাখ টাকা।
  • নির্মাণ সমাপ্তি: এক বছর আগে (২০২৪ সালে)।
  • ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান: মেসার্স ইসলাম ব্রাদার্স, পরিচালনায় মনিরুল ইসলাম তালুকদার (ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক এমপি আমির হোসেন আমুর ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত)।

সমস্যার বিবরণ

  • সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলেও অ্যাপ্রোচে বালি ভরাট ও সংযোগ সড়কের কাজ বাকি রয়েছে।
  • ফলে শত শত পথচারী, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো ও মই ব্যবহার করে সেতু পার হচ্ছেন।
  • তালতলা বাজারে মালামাল পরিবহনের জন্য ভ্যান বা অন্য যানবাহন ব্যবহার অসম্ভব হওয়ায় ব্যবসায়ীদের ঘুরপথে যাতায়াত করতে হচ্ছে, যা সময় ও খরচ বাড়াচ্ছে।
  • ঠিকাদারকে কাজের বিল পরিশোধ করা হলেও অ্যাপ্রোচের কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে ঠিকাদার মনিরুল ইসলাম তালুকদারকে দেখা যাচ্ছে না।

জনদুর্ভোগ ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

  • মোসা. হাওয়া আক্তার (বাইতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা): “শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাপ্রোচের কাজ ফেলে রেখেছে।”
  • সোহান হাওলাদার (তালতলা বিজি ইউনিয়ন একাডেমির দশম শ্রেণির ছাত্র): “এক বছর আগে সেতু নির্মিত হলেও বাঁশের সাঁকো দিয়ে ওঠানামা করতে হচ্ছে, যা খুব বিপজ্জনক।”
  • এলাকাবাসী: তালতলা বাজারে যাতায়াতে সমস্যার কারণে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। অ্যাপ্রোচ না থাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ, ফলে ঘুরপথে চলাচল করতে হচ্ছে।

এলজিইডির ভূমিকা ও প্রতিক্রিয়া

  • ইকবাল কবীর (নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলী):
  • ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে, তবে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
  • অ্যাপ্রোচের কাজ অসম্পূর্ণ থাকলেও বিল পরিশোধ করা হয়েছে, তবে ‘সিকিউরিটি মানি’ রাখা আছে।
  • কাজের ব্যয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং পত্রিকায় রিপোর্ট না করার অনুরোধ করেন।
  • মইনুল আজম (সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার):
  • অ্যাপ্রোচে দ্রুত বালি ভরাটের আশ্বাস দেন।
  • সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৪০ লাখ টাকা বলে জানান।
  • কাগজপত্র না দেখে বিস্তারিত তথ্য দিতে অপারগ এবং রিপোর্ট না করার অনুরোধ করেন।

জনমনে প্রশ্ন

  • অ্যাপ্রোচের কাজ শেষ না হওয়ার আগেই ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করা কতটা যৌক্তিক?
  • এলজিইডির উদাসীনতা ও তদারকির অভাবে জনদুর্ভোগ কেন বাড়ছে?
  • ঠিকাদারের গরহাজিরা এবং কাজ অসম্পূর্ণ রাখার বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?

প্রত্যাশা

এলাকাবাসী ও স্থানীয়রা দ্রুত সেতুর অ্যাপ্রোচ ও সংযোগ সড়কের কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন। তারা এলজিইডির কাছে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা প্রত্যাশা করছেন, যাতে এই সেতু জনগণের জন্য সত্যিকারের কল্যাণকর হয়।

Check Also

রাস্তায় ফেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীকে মারধর

Spread the loveফরিদপুরের নগরকান্দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী ও সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী বৈশাখী ইসলাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *