গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় রোববার (৪ মে ২০২৫) সন্ধ্যা ৭টার দিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে যানজটে আটকে থাকা অবস্থায় ৪-৫টি মোটরসাইকেলে আগত দুর্বৃত্তরা এ হামলা চালায়। হামলায় হাসনাতের হাতে আঘাত লাগে এবং গাড়ির গ্লাস ও উইন্ডশিল্ড ভেঙে যায়।
হাসনাত আবদুল্লাহ রোববার বিকেলে একটি সাদা মাইক্রোবাসে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যক্তিগত কাজে গিয়েছিলেন। তাঁর গাড়িচালক মো. দুলাল মিয়া জানান, সন্ধ্যার কিছু আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। চান্দনা চৌরাস্তা পার হওয়ার সময় কয়েকটি মোটরসাইকেল তাঁদের পিছু নেয়। এরপর দুর্বৃত্তরা ঢিল ছুড়ে এবং লাঠি দিয়ে গাড়ির গ্লাসে আঘাত করে, যার ফলে গ্লাস ভেঙে যায় এবং হাসনাতের কনুই কেটে যায়।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জাহিদ হাসান জানান, হামলার পর হাসনাতের গাড়িবহর দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বোর্ডবাজারের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) ক্যাম্পাসে আশ্রয় নেয়। পরে পুলিশ তাঁকে উত্তরা পূর্ব থানায় নিয়ে যায় এবং রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিরাপদে ঢাকায় পৌঁছে দেয়।
হামলার ঘটনার প্রতিবাদে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করেন। গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় রাত ৯টায় বিক্ষোভ মিছিল এবং পরে মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। একইভাবে, নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া শহীদ মিনারের সামনে থেকে রাত ১০টায় মশাল মিছিল বের হয়, যা নগরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়।
হামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করেছে। গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার রবিউল হাসান জানান, আটককৃতরা হলেন মো. নিজাম উদ্দিন, গাজীপুর মহানগরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা, এবং মাসুম আহমদ (দিপু), কাশিমপুর থানা শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের সভাপতি। এ ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে এবং আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
হামলার খবর রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ফেসবুকে প্রকাশ করেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি লিখেন, “হাসনাতের গাড়িতে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী গাজীপুর এলাকায় হামলা করেছে। গাড়ির গ্লাস ভেঙে গেছে, হাত রক্তাক্ত হয়েছে।” তিনি স্থানীয়দের হাসনাতকে সুরক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানান।
ঘটনাস্থলের কাছে একটি দোকানে চা খাচ্ছিলেন স্থানীয় শ্রমিক কবির হোসেন। তিনি বলেন, কয়েকটি মোটরসাইকেল থেকে গাড়িতে ঢিল ছোড়া হয় এবং দ্রুত পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। স্থানীয় বাসিন্দা আওলাদ হোসেন জানান, হামলাকারীরা যুবক বয়সের ছিল এবং দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
আইইউটি ক্যাম্পাসে অবস্থানকালে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না, পরে কথা বলব।” বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক সানিউল আলম জানান, হাসনাতের গাজীপুর সফর সম্পর্কে তাঁরা অবগত ছিলেন না এবং কোনো পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল না।
এ ঘটনায় এনসিপি ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। পুলিশ হামলাকারীদের শনাক্ত ও বিচারের আশ্বাস দিয়েছে।