সংবিধান সংস্কারের যেসব বিষয়ে ঐকমত্যে দলগুলো

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার ও গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ঐকমত্য পোষণ করলেও ‘বহুত্ববাদ’ অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করেছে। অনেক দল এই চারটি মূলনীতির পাশাপাশি অন্যান্য বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। সোমবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

কমিশন জানায়, সংবিধান সংস্কারের কিছু মৌলিক বিষয়ে এখনও ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে:

• বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের কাঠামো
• তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ ও মেয়াদ
• জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন
• প্রধানমন্ত্রীর পুনর্নির্বাচনের সংখ্যা
• সংসদ সদস্যদের একাধিক পদে থাকার সীমা
• রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়া

তবে এসব বিষয়ে দলগুলো আরও আলোচনার প্রতি নমনীয়তা দেখিয়েছে।

যেসব বিষয়ে ঐকমত্য বা আংশিক ঐকমত্য:

• তত্ত্বাবধায়ক সরকার: পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই।
• মূলনীতি: ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার ও গণতন্ত্র’-এ ঐকমত্য; ‘বহুত্ববাদ’ বাদ দেওয়ার পক্ষে অধিকাংশ দল।
• নাগরিক অধিকার: সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার সম্প্রসারণ ও রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা নির্ধারণে সম্মতি, তবে তালিকা ও প্রয়োগের মাত্রায় মতভেদ।
• দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা: অধিকাংশ দল সমর্থন করলেও কিছু দল এককক্ষের পক্ষে।
• নারীদের জন্য আসন: নিম্নকক্ষে ১০০ আসন সংরক্ষণে ঐকমত্য, তবে পদ্ধতি নিয়ে ভিন্নতা।
• ডেপুটি স্পিকার: বিরোধী দল থেকে নিয়োগের পক্ষে সমর্থন।
• উচ্চকক্ষ: ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ গঠনে সম্মতি, তবে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ঐকমত্য নেই।
• রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা: সংবিধানের ৪৮(ক) অনুচ্ছেদ সংশোধনে ঐকমত্য, তবে ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে মতভেদ।
• ৭০ অনুচ্ছেদ: দলের বিপক্ষে ভোটের বিধান পরিবর্তনে ঐকমত্য; অর্থ বিল, আস্থা ভোট ও সংবিধান সংশোধন বিলে দলীয় শৃঙ্খলা বাধ্যতামূলক, কিছু দল জাতীয় নিরাপত্তা বিল যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে।
• স্থায়ী কমিটি: পাবলিক একাউন্টস, এস্টিমেট, পাবলিক আন্ডারটেকিং ও প্রিভিলেজ কমিটির সভাপতিত্ব বিরোধী দলের জন্য সংরক্ষণে সম্মতি।

• ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের প্রিন্ট কপি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়।
• ৫ মার্চ ৫টি কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে ১৬৬টি সুপারিশ (সংবিধান সংস্কার: ৭০টি, নির্বাচন: ২৭টি, বিচার বিভাগ: ২৩টি, জনপ্রশাসন: ২৬টি, দুর্নীতি দমন: ২০টি) ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামতের জন্য প্রেরণ করা হয়।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, অমীমাংসিত বিষয়গুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে আরও আলোচনা অব্যাহত থাকবে।