জয়পুরহাট সদর উপজেলার কুঠিবাড়ি এলাকায় ছোট যমুনা নদীর পুরাতন সেতুর দক্ষিণ পাশের একটি পিলারের নিচে একটি সুড়ঙ্গ দিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অঝরে পানি বয়ে আসছে। সুড়ঙ্গের মুখে একটি দুই-তিন হাত লম্বা ডোঙা লাগানো হয়েছে, যার মাধ্যমে পানি নদীতে পড়ছে। এই পানি কখনো স্বচ্ছ, আবার কখনো বালি ও ময়লাযুক্ত। এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে স্থানীয় এবং দূর-দূরান্তের মানুষ এই পানিকে অলৌকিক মনে করে বোতলে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন এবং রোগ নিরাময়ের আশায় পান করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুব হোসেন বলেন, “এটি অলৌকিক কিছু নয়। পাড়ের মাটিতে বালু আছে, এটি সম্ভবত বালুর জোয়ারের পানি। তবে লোকজন এই পানি বোতলে ভরে নিয়ে রোগমুক্তির জন্য পান করছেন। এখনো কারও রোগ সেরেছে বলে শুনিনি।”
মনোয়ারা বেগম, একজন স্থানীয় বাসিন্দা, বলেন, “আমি একটু অসুস্থ, তাই এই পানি বোতলে ভরে পান করেছি। অনেকে এটাকে অলৌকিক পানি মনে করছেন।”
অপর বাসিন্দা লিপি বেগম বলেন, “অনেকে এই পানি পান করে সুস্থ হয়েছেন বলে শুনেছি। আমার মেয়ে অসুস্থ, তাই দুই বোতল পানি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।”
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় এক সপ্তাহ আগে সুড়ঙ্গ দিয়ে পানি আসতে দেখে তারা বিস্মিত হন। একজন তরুণ সুড়ঙ্গের মুখে ডোঙা লাগানোর পর থেকে পানি সংগ্রহ আরও সহজ হয়েছে। প্রতিদিন সকাল-বিকেলে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ অনেকে পানি সংগ্রহ করতে ভিড় করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুঠিবাড়ি এলাকায় ছোট যমুনা নদীর পাশে দুটি সেতু রয়েছে—একটি পুরাতন এবং অপরটি নতুন। নতুন সেতু নির্মাণের পর পুরাতন সেতুটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। পুরাতন সেতুর দক্ষিণ পাশের পিলারের নিচে একটি ছোট্ট সুড়ঙ্গ থেকে পানি বয়ে আসছে। সুড়ঙ্গের মুখে লাগানো ডোঙা দিয়ে পানি নদীতে পড়ছে। সুড়ঙ্গের আশপাশে জঙ্গল ও চুল পড়ে থাকলেও একজন তরুণ তা পরিষ্কার করছিলেন। সেখানে কয়েকজন নারী ও শিশু-কিশোর বোতল হাতে পানি সংগ্রহ করছিলেন। আশপাশের এলাকা শুষ্ক, এবং নদীর বাঁধও সুড়ঙ্গের পিছনে রয়েছে।
জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক বলেন, “এই পানি অপরিশুদ্ধ। এটি পান করলে পানিবাহিত রোগ যেমন ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড ও জন্ডিস হতে পারে।” তিনি এই ঘটনা থানা পুলিশকে জানানোর কথা উল্লেখ করেছেন।
স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা ধারণা করছেন, এই পানি সম্ভবত বালুর জোয়ার থেকে আসছে। তবে, পানির প্রকৃত উৎস সম্পর্কে এখনো কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
শহিদুল ইসলাম নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “প্রায় এক সপ্তাহ ধরে লোকজন এই পানি বোতলে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন। সকাল-বিকেলে ভিড় বাড়ছে।” স্থানীয়রা এই পানিকে অলৌকিক মনে করে পান করলেও এখনো কেউ রোগমুক্তির প্রমাণ পাননি।
যদিও স্থানীয়দের মধ্যে এই পানি নিয়ে কৌতূহল ও বিশ্বাস তৈরি হয়েছে, তবে চিকিৎসকরা এর নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক করেছেন। পানির উৎস ও গুণগত মান নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এটি পান করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা কুঠিবাড়ি এলাকাকে সাময়িকভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে।