বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর আনুমানিক ১ কোটি ৭৯ লাখ মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, যার মধ্যে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট একটি অন্যতম কারণ। হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে আপনার খাদ্যাভ্যাসে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। নিচে এমন ৫টি খাবারের তালিকা দেওয়া হলো, যা এড়িয়ে চললে আপনি হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে পারেন।
এই ৫টি খাবার এড়িয়ে চলুন
১. প্রক্রিয়াজাত মাংস
প্রক্রিয়াজাত মাংসে (যেমন: সসেজ, হটডগ, বেকন) স্যাচুরেটেড ফ্যাট, সোডিয়াম এবং প্রিজারভেটিভ বেশি থাকে। এগুলো রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুসারে, প্রতিদিন ৫০ গ্রামের বেশি প্রক্রিয়াজাত মাংস খেলে করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি ১৮% বৃদ্ধি পায়।
২. ভাজা খাবার
নিয়মিত ভাজা খাবার (যেমন: ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ভাজা মুরগি) খাওয়া হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এতে থাকা স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাট ধমনীতে প্লাক জমা করে, যা রক্তপ্রবাহ কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. বেশি মিষ্টি খাবার
কোল্ড ড্রিঙ্কস, ক্যান্ডি এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত মিষ্টি স্থূলতা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত চিনি শরীরে ফ্যাট জমতে সাহায্য করে, যা হৃৎপিণ্ডের উপর চাপ সৃষ্টি করে।
৪. লবণ বেশি থাকা খাবার
চিপস, স্ন্যাকস এবং টিনজাত খাবারে উচ্চ মাত্রায় সোডিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ বাড়ায় এবং হৃৎপিণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরে পানির পরিমাণ বাড়ায়, যা রক্তচাপ বৃদ্ধি করে এবং হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতার ঝুঁকি তৈরি করে।
৫. লাল মাংস
গরুর মাংস বা খাসির মাংস অতিরিক্ত খেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে, যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের কারণ হতে পারে। পরিমিত মাত্রায় এবং চর্বিহীন মাংস খাওয়া উচিত।
হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখার ৫টি পদক্ষেপ
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলুন:
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: আপনার খাদ্যতালিকায় তাজা ফল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য (যেমন: ওটস, বাদামি চাল) অন্তর্ভুক্ত করুন। এগুলো ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজে সমৃদ্ধ, যা হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী।
- তেল ও লবণ কমান: রান্নায় তেল এবং লবণের ব্যবহার কমিয়ে দিন। অতিরিক্ত তেল এবং লবণ হৃৎপিণ্ডের উপর চাপ সৃষ্টি করে।
- নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা, সাইকেল চালানো বা অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপ করুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়ান: ধূমপান এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এগুলো সম্পূর্ণ পরিহার করুন।
- রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল পরীক্ষা করুন। উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
উপসংহার
হৃদরোগ একটি নীরব ঘাতক, তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার মাধ্যমে এর ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। উপরে উল্লিখিত খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন এবং সুস্থ জীবনযাপনের জন্য প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো মেনে চলুন। আপনার হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা আপনার হাতেই!