হ্যালো বাংলাদেশ ২৪ নিউজ ২০শে জানুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই মাঘ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৫৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২০
হ্যালো বাংলাদেশ নিউজ ডেস্কঃ
[ আমি সংস্কৃত-জানা লোক নই। তাই, সংস্কৃত শ্লোক বা মন্ত্রগুলোর উচ্চারণ-বানানে ভুল থাকতে পারে। এজন্যে, আন্তরিকভাবে দুঃখিত।]
ভারতীয় ধর্মশাস্ত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন হল বেদ। বেদ-এর সংখ্যা চার। ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন হল ঋগ্বেদ। বেদ-এর ভাষা বৈদিক। বৈদিক ও সংস্কৃত ভাষার ধ্বনিবৈশিষ্ট্য একইরকম মনে হলেও মূলত ভাষাদু’টো এক নয়। উপনিষদ, পুরাণ, গীতা, রামায়ন ও মহাভারত ইত্যাদির ভাষা সংস্কৃত। বৈদিক ও সংস্কৃত জনগণের কথ্যভাষা ছিল না। এগুলো ছিল জ্ঞানচর্চা ও সাহিত্যের ভাষা—ব্রাহ্মণ পণ্ডিত’রা যা চর্চার একচেটিয়া অধিকার ভোগ করতেন বা করে আসছেন।
নরাশংস:
বেদ-এর শাস্ত্রসমূহে “নরাশংস” শব্দটির লক্ষণীয় প্রয়োগ আছে। ‘নরাশংস’ শব্দটি ‘নর’ ও ‘আশংস’ শব্দযোগে গঠিত। ‘নর’ মানে ‘ব্যক্তি’। এটি পুরুষবাচক। আর, ‘আশংস’ মানে ‘প্রশংসিত’। অর্থাৎ নরাশংস মানে “প্রশংসিত ব্যক্তি’। এটি কর্মধারয় সমাস; যা নিষ্পন্ন হয় এভাবে: নরশ্চাসো আশংস। এ-শব্দটি কোন দেবতার ওপর প্রযোজ্য নয়। কেননা, ‘নর’ দেবযোনিজাত বা দেবতাবাচক নয়, মনুষ্যবাচক শব্দ। ইসলামের নবি’র নাম ‘মুহাম্মদ’। মুহাম্মদ শব্দটির অর্থ প্রশংসিত। ইসলামের নবি মুহাম্মদ একজন ব্যক্তিমানুষ; দেবতা বা এর সমার্থক-অতিপ্রাকৃত কোন সত্তা নন বা ছিলেন না। ঋগ্বেদে “কীরি” নামটিও এসেছে; যার অর্থ “ঈশ্বরপ্রশংসক”। মুহাম্মদ(স.)-এর আরেকটি সর্বজনবিদিত নাম হল “আহমদ”। আহমদ অর্থ প্রশংসক বা প্রশংসাকারী। আর মুহাম্মদের আহমদ নামটির মানে হচ্ছে আল্লাহর প্রশংসাকারী। শাব্দিকভাবে ‘নরাশংস’ ও ‘মুহাম্মদ’ এবং ‘কীরি’ ও ‘আহমদ’ সমার্থক।
ঋগ্বেদের অনেক স্থানে নরাশংস-এর উল্লেখ আছে। এমনকি ঋগ্বেদের আটটি মন্ত্রই ‘নরাশংস’ শব্দ দিয়ে সূচিত হয়েছে। ঋগ্বেদের প্রথম(মণ্ডল) অধ্যায়ে (১) ১৩তম সুক্ত, তৃতীয় মন্ত্র(২) ১৮তম সুক্ত, ৯০তম(৩) ১৬০তম সুক্ত, চতুর্থ মন্ত্র এবং দ্বিতীয় অধ্যায়(৪) তৃতীয় সুক্ত, দ্বিতীয় মন্ত্র, পঞ্চম অধ্যায়ে(৫) পঞ্চম সুক্ত, দ্বিতীয় মন্ত্র, সপ্তম অধ্যায়ে(৬) দ্বিতীয় সুক্ত, দ্বিতীয় মন্ত্র, দশম অধ্যায়ে(৭) ৬৪তম সুক্ত, তৃতীয় মন্ত্র ও (৮) ১৮২তম সুক্ত, দ্বিতীয় মন্ত্রসমূহে নরাশংসের প্রশস্তি বর্ণিত হয়েছে। সামবেদ সংহিতার ১৩৪৯তম মন্ত্রে এবং বাজসেনীয় সংহিতার ২৯ অধ্যায়ের ২৭তম মন্ত্রে নরাশংস-এর উল্লেখ আছে। অথর্ববেদ সংহিতার বিংশতি কাণ্ডের ১২৭তম সুক্তে নরাশংসের প্রশস্তিজ্ঞাপক ১৪টি মন্ত্র রয়েছে। অনন্তর তৈত্তিরীয় আরণ্যকে (৩/৬/৩/১) নরাশংসের প্রশস্তি এবং শতপথ ব্রাহ্মণ-এর প্রথম কাণ্ডে দর্শপৌর্নমাসেষ্টিবিষয়ক অনুষ্ঠানের অন্তর্গত পঞ্চ প্রয়াগসমূহে ‘নরাশংস প্রয়াগভাগ’ও আছে। এভাবেই ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ-এ নরাশংস শব্দটি পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে।
কে এ-ই নরাশংস? কী তার পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য, কোথায়-কখন-কীভাবে তার আগমন ঘটবে ইত্যাদি প্রসঙ্গে অনেক বিববরণ বেদসমূহে আছে। নরাশংসের আবির্ভাবের সময় সম্পর্কে বলা হয়েছে: “ইন্দ্রজনা উপশ্রুত নরাশংস স্তবিষ্যতে” অর্থাৎ ” হে বিশ্বমানব শোন, ভবিষ্যতে নরাশংসের প্রশস্তি করা হবে(অথর্ববেদ ২০/১২৭/১)। ঋগ্বেদ, সামবেদ ও যজুর্বেদ-এর অনেক পরবর্তী যুগের বেদ হল অথর্ববেদ। এজন্যেই, নরাশংসের আবির্ভাব বেদসমূহ অবতরণের পূর্ববর্তী নয় বরং অনেক পরবর্তী কালে হবে বলেই বেদ থেকে প্রমাণিত।
নরাশংসের বাহন হবে উট। বলা হয়েছে: উষ্ট্রযস্য প্রবাহিনো—-(অথর্ববেদ ২০/১২৭/২) অর্থাৎ উটের প্রাচুর্য থাকবে। উটের প্রাচুর্য মরু এলাকায় বেশি। এজন্যে, নরাশংসের আবির্ভাব মরু এলাকায় হবে বলেই প্রতীয়মান হয়। নরাশংস সকলের প্রিয় ও মিষ্টভাষী হবেন—–নরাশংস মিহপ্রিয়ম স্নিণ্যজ্ঞ উপহৃয়ে। মধুজিহ্বং হবিষ্কৃতম(ঋগ্বেদ ১/১৩/৩)। আলোকিত চেহারা ঘরে ঘরে আলো জ্বালবে—নরাশংসঃ প্রতিধামান্যম্নন দিবঃ প্রতিমহ্ন স্বর্চিঃ। আহমদ সূর্যের মত দীপ্তিমান প্রজ্ঞাপূর্ণ
জীবনব্যবস্থার অধিকারী—-অহমিধিঃ পিতুঃ পরিমেধামৃতম্য জগ্রভ। অহং সূর্য ইবাজনি(সামবেদ প্র.২.দ.৬.মং ৮)। নরাশংস পাপ প্রতিরোধকারী—-নরাশংস বাজিনং বাজযন্নিহ ক্ষয়দীরং পুষনং সুম্নৈরী মহে। রথংন বসবঃ সুদানবো বিশ্বস্মান্নো অহংসে নিশ্পিপর্তন(ঋগ্বেদ ১/১০৬/৪)।
হিন্দুধর্ম বা সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে এসব লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্যের কোন নরাশংসের আবির্ভাবের প্রমাণ পাওয়া যায় না—একমাত্র একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব ছাড়া। তিনি হলেন বর্তমান ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক ও প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ(স.)। এমনকি হিন্দুধর্মেও কেউ কোনদিন নিজেকে নরাশংস বলে দাবি করে নি। বেদ-এ বর্ণিত নরাশংসের যাবতীয় পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্যসমূহ কেবল মুহাম্মদের সাথেই হবহু সাদৃশ্যপূর্ণ। যেমন: নামের দিক থেকে নরাশংস মানেই মুহাম্মদ(১), কীরি মানে আহমদ(২), আগমন বেদ-পরবর্তী কালে(৩), উট-প্রাচুর্যের মরু এলাকায়(৪), তিনি নিজেও উষ্ট্রারোহী হয়ে মদিনায় হিজরত করেছিলেন। সকলের প্রিয়ভাজন ও মিষ্টভাষী (৫), আলোকিত তথা নুরানী চেহারার অধিকারী(৬) ও ঘরে ঘরে সত্যের আলো প্রজ্জ্বলনকারী(৭) ছিলেন। আল্লাহপ্রদত্ত প্রজ্ঞাপূর্ণ জীবনবিধানের অধিকারী(৮), পাপের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধকারী(৯) এবং পবিত্রতার প্রতিষ্ঠাতা(১০) হিসেবে ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত ও স্বীকৃত। সুতরাং নরাশংসই যে মুহাম্মদ বা মুহাম্মদই যে নরাশংস—এতে সংশয়ের কোন অবকাশ নেই। [ চলবে ]
Santa Anna
Bercelona, Spain
Tel: +34 631 72 10 58
hellobd24news@gmail.com
উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতিঃ শিকদার মুহাম্মদ কিবরিয়াহ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ শাহ নেছার আলী
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ রুহুল আমীন
নির্বাহী সম্পাদকঃ সাদেক আহমদ শিকদার
ব্যবস্হাপনা সম্পাদকঃ রেজাউল করিম (সুমন)