হ্যালো বাংলাদেশ ২৪ নিউজ ২২শে এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই বৈশাখ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:০১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৫, ২০২০
হ্যালো বাংলাদেশ নিউজ ডেস্কঃ
সময়ের সাথে সাথে সিলেটে বাড়ছে মানুষের মাঝে আহাজারি। বৃহত্তর সিলেটের প্রায় প্রতিটি পরিবারের মানুষ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। এই আহাজারির কারণ মরণব্যাধী নবেল করোনাভাইরাস। প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের বড় একটি অংশ বসবাস করেন বিশ্বের নানান দেশে।
করোনাভাইরাস যত ছড়াচ্ছে, প্রবাসীদের স্বজনদের মাঝে বাড়ছে আতংক। বাড়ছে হতাশাও। শনিবার লন্ডনে সিলেটের এক ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়ায় লন্ডনী প্রবাসীদের পরিবারের মাঝে বিরাজ করছে অজানা আতংক। শুক্রবার স্পেনে সিলেটের ৩ জন আক্রান্ত হওয়ায় অধিকাংশ প্রবাসীদের পরিবার দিন কাটাচ্ছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়।
গত আড়াই মাস আগে করোনাভাইরাস চীন দেশের উহান প্রদেশে দেখা দিয়েছিল। চীনে সিলেট কিংবা বাংলাদেশের তেমন প্রবাসী না থাকায় মানুষের মাঝে তেমন কোন আতংক দেখা যায়নি। এরপর এই ভাইরাস ছড়ায় ইরানে। সে দেশেও প্রবাসী বাংলাদেশী তেমন নেই। কিন্তু দিন বাড়ার সাথে সাথে করোনাভাইরাস ছড়াতে থাকে দুনিয়া জুড়ে।
বর্তমানে এই ভাইরাস বিশ্বের ১৩১ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। মারা গেছেন ৫ হাজারেরও অধিক মানুষ। এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন সবচেয়ে ইটালির মানুষ। সে দেশে ২ লাখ ৬০ হাজারের মতো বাংলাদেশী বসবাস করেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে। এদের বড় একটি অংশ বৃহত্তর সিলেটের বাসিন্দা। ইটালিতে একদিনে ১৯২ জন লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এতে ইটালিতে বসবাসরত সিলেটে তাদের পরিবার জুড়ে চলছে ভয়ঙ্কর থাবা। যদি পরিবারের কেউ সেখানে আক্রান্ত হন এমন আতংকে দিনাতিপাত করছেন প্রবাসীরা। তেমনি একই ভয়ে আছেন দেশে থাকা তাদের পরিবারের লোকজনও।
ইটালির মিলান সিটিতে বসবাস করেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম সজীব ও দেলোয়ার হুসেন। সজীব জানিয়েছেন, একটি ঘরে তারা ৬ জন বসবাস করেন। সবাই গত এক মাস থেকে কাজকর্ম ছেড়ে দিয়েছেন। ঘরের নিচ থেকে একটি দোকানে গিয়ে প্রয়োজনীয় বাজার করে তারা চলে আসেন ঘরে। সিলেটভিউকে তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ শহরে তার পরিবারের সবাই বসবাস করেন। প্রতিদিন পরিবারের লোকজন আতংকিত হয়ে তাকে ফোন করেন। পরিবারের লোকজন, যখন গণমাধ্যমে দেখেন সে দেশে ভাইরাস আরো বেশি বেড়েছে কিংবা মৃত্যু হয়েছে তখন বেশি আতংকিতবোধ করেন দেশে অবস্থানরতরা।
যুক্তরাজ্যের ইষ্ট লন্ডন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক সিলেটী মৃত্যুবরণ করেছেন। গোলাপগঞ্জের বাগিরঘাট গ্রামে তার বাড়ি। ৬৬ বছর বয়সী এই ব্যক্তির নাম আফরোজ মিয়া। শুক্রবার (স্থানীয় সময়) ভোরে রয়েল লন্ডন হাসপাতালে করোনার সঙ্গে ৮ দিন যুদ্ধ করার পর মৃত্যুবরণ করেন তিনি। শুক্রবার পর্যন্ত ব্রিটেনে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ১২ জন। এর মধ্যে দুজন বাংলাদেশী। যুক্তরাজ্যে ৩ লাখেরও অধিক সিলেটি বসবাস করেন। সে দেশে এই ভাইরাস ছড়াতে থাকলে দেশে তাদের পরিবারের মাঝে উদ্বেগের শেষ নেই।
ত শুক্রবার স্পেনে করোনাভাইরাসে আট বাংলাদেশী আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে ওই বাংলাদেশীরা করোনায় আক্রান্ত হন।
আটজনের মধ্যে তিনজনের বাড়ি সিলেটে। আর বাকি ৫ জনের মধ্যে ঢাকার দুইজন, যশোরের একজন এবং অপরজনের বাড়ির ঠিকানা জানা যায়নি।
তাদের সবাই বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে ঢাকার ২ জন স্বামী -স্ত্রীকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এই প্রথম এক সাথে দেশটিতে মোট আটজন বাংলদেশি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন।
বাংলাদেশী মানবাধিকার সংস্থা ভালিয়েন্তে বাংলার সভাপতি মোঃ ফজলে এলাহী এ তথ্য সিলেটভিউকে নিশ্চিত করেছেন। সিলেটভিউকে তিনি আরো জানান, আক্রান্তদের ৩ জনের বাড়ি সিলেটে। এদের মধ্যে একজনের বয়স ৪৫, একজনের ৪৩ এবং ওপরজন মহিলা ৩৫ বছর বয়সী। তারা দেশটির রাজধানী মাদ্রিদের বাঙালি অধ্যুষিত লাভাপিয়েসে বসবাস করেন।
এমনকি বাঙালি অধ্যুষিত লাভাপিয়েসের বাঙালি পরিচালনাধীন বায়তুল মোকাররম বাংলাদেশ মসজিদে আজকের জুম্মার নামাজও সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। যানবাহনে এবং চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে আনতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এমন পরিস্তিতে আতঙ্কিত স্প্যানিশ নাগরিকসহ প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
স্পেনে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৩জন। এর মধ্যে ১৮৯ জন সুস্থ হয়েছেন।
শুক্রবার স্পেনে ৩ জন সিলেটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর দেশে অবস্থানরত তাদের পরিবার ছাড়াও গোটা সিলেটের মানুষের মাঝে আতংক আরেক দফা বেড়ে গেছে। কেন না, লন্ডনে একজন সিলেটি ও স্পেনে ৩ জন আক্রান্ত হওয়ার ফলে প্রতিটি পরিবার দিন কাটাচ্ছে হতাশায়।
স্পেনের বালাদলিদ শহরে বসবাস করেন মেন্দিবাগের আব্দুল বাহার, মাসুদ আহমদ, জকিগঞ্জের সোনাসার গ্রামের ওবায়দুল হক কুবাদসহ আত্মীয়স্বজন মিলে ১৪ জন লোক। সেখানে সকল স্কুল বন্ধ করা হয়েছে তারা জানিয়েছেন।
দেশে অবস্থানরত ব্যবসায়ী বাহারের পিতা আব্দুল হান্নান সিলেটভিউকে জানিয়েছেন, ছেলে-মেয়ে নাতিনাতনির জন্য দোয়া করতেছি আল্লাহর কাছে। এছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই।
আমেরিকায়, ফ্রান্সেও সিলেটি লোকজন কম নয়। আমেরিকায় জরুরী অবস্থা জারী করা হয়েছে ইতিমধ্যে। নিউ ইয়র্কের জ্যামাইকা স্ট্রিটে বসবাস করেন জকিগঞ্জের সহিদাবাদ গ্রামের বায়জিদ সুলতান মঞ্জু। দেশে রয়েছেন তার ভাই সিরাজুল ইসলাম সাজু। তিনি সিলেটভিউকে জানিয়েছেন, আমেরিকায় এই রোগ দিনে দিনে ছড়াচ্ছে বেশি করে। তাই সেখানে বসবাসরত তার ভাই ও পরিবারের অন্যান্যদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
করোনাভাইরাস নিয়ে সিলেটের মানুষের মাঝে কি পরিমাণ আহাজারি গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় দেখা গেছে। জুম্মার নামাজের সময় সিলেটের মসজিদে মসজিদে প্রবাসীদের জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়। বেশীরভাগ মুসল্লীদের অঝোর ধারায় কাঁদতে দেখা গেছে। সিলেটের প্রবাসীসহ সকল মানুষ যাতে মহামারী এই রোগ থেকে রক্ষা পান সে জন্য দোয়া করেন মসজিদের ইমাম ও মুসল্লীরা।
Santa Anna
Bercelona, Spain
Tel: +34 631 72 10 58
hellobd24news@gmail.com
উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতিঃ শিকদার মুহাম্মদ কিবরিয়াহ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ শাহ নেছার আলী
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ রুহুল আমীন
নির্বাহী সম্পাদকঃ সাদেক আহমদ শিকদার
ব্যবস্হাপনা সম্পাদকঃ রেজাউল করিম (সুমন)