হ্যালো বাংলাদেশ ২৪ নিউজ ১লা মার্চ, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:১৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০২১
মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম
নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা শহরগুলো প্রমাণ করে বহু বছর যাবত আমাদের যোগাযোগ ছিল নদীনির্ভর। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে সড়ক যোগাযোগের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ ক্ষেত্রেও বাধা ছিল অসংখ্য নদনদী। যেকোনো সড়ক তৈরি করতে গেলেই ছোট-বড় নদী অতিক্রম করতে হতো। অনেক ফেরি চালু ছিল এখনো আছে। দক্ষিণ-পশ্চিমা অঞ্চলের লোকজনের রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগের সবচেয়ে বড় বিপত্নী ছিল এই সর্বনাশা পদ্মা নদী। উত্তর-বঙ্গের জন্য যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু হলে, রাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জন্য সেতু নির্মাণ সময়ের দাবি হলেও দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান নদীর পর পৃথিবীর দ্বিতীয় খরস্রোতা নদী হিসেবে চিহ্নিত পদ্মা নদীতে সেতু নির্মাণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল যা রাষ্ট্রের অর্থসঙ্গিতে প্রায় আসম্ভব ছিল! ২০০৯ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসলে তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণকে জাতীয় ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে অগ্রাধিকার তালিকায় নিয়ে আসেন। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ও আইডিবি এই সেতুর অর্থায়নের অংশীদার হলেও শেষ পযর্ন্ত অযথাই দুনির্তীর অভিযোগ তোলে একটি নোংরা বির্তক সৃষ্টি করে সরকারকে বিব্রত কর অবস্থায় ফেলে তারা সরে দাড়ায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলকে পদ্মা নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন রাখতে চাননি, তাঁর অত্যন্ত দূরদর্শী ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্তে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এ বিশাল সেতু নির্মাণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে “পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প” গ্রহণ করেন। এ চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশই যে জিতবে, সেটি ক্রমেই দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এ চ্যালেঞ্জে ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের নিমিত্তে সেতুর নির্মাণ সামগ্রী- কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণে “চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি” সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ২০১৪ সালে ডিসেম্বরে আনুষ্টানিক ভাবে কাজ শুরু করে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু নির্মাণ ইতিহাসের একটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে থাকবে একটি একক রেলপথ। পদ্মা নদীর অববাহিকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান ইতিমধ্যে বসানো সম্পন্ন হয়েছে যার দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মাণের শেষ পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুর ৪১তম বসানোর বদৌলতে সেতুর মূল কাঠামো ৬.১৫ কিলোমিটার বা পুরো পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান হয়েছে। এরপরের ধাপে সেতুর ওপর সড়ক ও রেলের স্ল্যাব বসানোর কাজ পুরোদমে চলছে। যদিও পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য- ৬.১৫ কিলোমিটার, তবে সংযোগ সড়কসহ এর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় প্রায় ৯ কিলোমিটার। সেতুর প্রস্থ- চার লেন সড়কের সেতুটির প্রস্থ ৭২ ফুট। সেতুতে সদূর ইউরোপের লুক্সেম বার্গ থেকে নিয়ে আসাা রেল স্ল্যাব দিয়ে রেললাইন স্থাপন হচ্ছে নিচ তলায় যা আরেক স্বপ্নের বাস্তবায়ন । পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ নদীশাসন। । নদী শাসনের জন্য চায়নার সিনো-হাইড্রো কোম্পানি নদীর দুই প্রান্তে ১২ কিলোমিটার কাজ করে যাচ্ছে। নদী শাসনের জন্য ব্যয় হবে – ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সেতুর সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য- দুই প্রান্তে ১৪ কিলোমিটার যা ফরিদপুরের ভাঙ্গা গোল চত্বর থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্ট পযর্ন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার কাজ সম্পূর্ন হয়েছে। ইউটিউবে আবলোকন করলে মনে হয় ইউরোপের কোন দেশের অসাধারণ নান্দনিক ভাবে তৈরিকৃত সড়ক যা এক সময় আমাদের রাষ্ট্রের জন্য কল্পনীয় ছিলা তা এখন বাস্তবে ধরাশায়ী । মাওয়া প্রান্তে 2.3 কিলোমিটার দৃষ্টি নন্দন সংযোগ সড়কের কাজ সম্পূর্ন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কাঠামো পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে ৩০ হাজার ১৯৩.৩৯ কোটি টাকা। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় করা হয়েছে- ২৪ হাজার ১১৫.০২ কোটি টাকা। সমীক্ষায় দেখা গেছে, আগামী একশ বছরে নদীর তলদেশের ৬২ মিটার পর্যন্ত মাটি সরে যেতে পারে। তাই আরও ৫৮ মিটার যোগ করে মোট ১২০ মিটার গভীরে গিয়ে পাইলিং করতে হচ্ছে বিধায় পৃথিবীর গভীরতম সেতু পাইলিং এর রেকর্ড অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, আর পদ্মা সেতু একটু বাঁকানো। কাজেই কাজটি অরেকটু কঠিন ছিল। প্রতি পিলারের জন্য ৬টি করে মোট ৪২টি পিলারের জন্য পাইলিং করতে হয়েছে ২৬৪টি। পরিবহন সুবিধা ছাড়া পদ্মা ছাড়া পদ্মা সেতুতে আরও রয়েছে- গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার লাইন। সেতু বাস্তবায়নের পর সড়ক ও রেল দুই পথেই দক্ষিণ বাংলার মানুষ অল্প সময়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে। এর ফলে এই প্রথমবারের মতো পুরো দেশ একটি সমন্বিত যোগাযোগ কাঠামোতে চলে আসবে। দক্ষিণ বাংলার গ্রামেও পরিবর্তনের হাওয়া লাগবে। সেতুটি রাজধানী ঢাকার সাথে সংযোগ স্থাপন করবে- দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার এবং এই অঞ্চলের ২১টি জেলার কৃষক, মৎস্যজীবী, তাঁতি, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভোক্তার সমাবেশ যে রাজধানী ঢাকা তার সঙ্গে অনায়াসে সংযুক্ত হতে পারবে। অন্যদিকে তারা রাজধানী থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে পারবে তাদের গ্রামের ও আশপাশের এসএমই উদ্যোগগুলোর জন্য। এরই মধ্যে পদ্মা সেতু হবে শুনেই ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নত হতে শুরু করেছে। আস্থার এই ধারা আরো বেগবান হবে। পদ্মা বহুমুখী সেতু কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা নয়, পুরো বাংলাদেশের যোগাযোগের সঙ্গে অর্থনীতিই বদলে দেবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এখন ভাবতে শুরু করছে সকালে রওনা দিয়ে দুপুরে ঢাকা পৌঁছে যাবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জনাব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, ২০২২ সালের জুন মাসে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এই সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
লেখক, প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজ, সিলেট।
Santa Anna
Bercelona, Spain
Tel: +34 631 72 10 58
hellobd24news@gmail.com
উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতিঃ শিকদার মুহাম্মদ কিবরিয়াহ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ শাহ নেছার আলী
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ রুহুল আমীন
নির্বাহী সম্পাদকঃ সাদেক আহমদ শিকদার
ব্যবস্হাপনা সম্পাদকঃ রেজাউল করিম (সুমন)