বিবাহ হল আল্লাহর পক্ষ থেকে বৈধ ও বরকতময় একটি সম্পর্ক, যার মাধ্যমে নারী ও পুরুষ বৈধভাবে একত্রে জীবন যাপন করতে পারে। বংশবৃদ্ধি, মানসিক প্রশান্তি এবং পারস্পরিক সহযোগিতার অন্যতম পবিত্র উপায় হল বৈধ দাম্পত্য সম্পর্ক। স্বামী-স্ত্রীর এই সম্পর্ক শুধুমাত্র দুনিয়ার শান্তি নয়, বরং পরকালের জন্যও সওয়াবের কাজ।
বাচ্চা নেওয়ার জন্য সহবাসের দোয়া
আরবি দোয়া:
بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
উচ্চারণ:
বিসমিল্লাহি, আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বানা, ওয়া জান্নিবিশ শাইত্বানা মা রাযাকতানা।
অর্থ:
“হে আল্লাহ! তোমার নামে আমরা শুরু করছি। তুমি আমাদের কাছ থেকে শয়তানকে দূরে রাখো, আর আমাদের দ্বারা যে সন্তান জন্মাবে, তাকেও শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা করো।”
উৎস: সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, মিশকাত
ফজিলত ও গুরুত্ব
হাদিস থেকে জানা যায়:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— “যখন তোমাদের কেউ স্ত্রীর সঙ্গে মিলনের ইচ্ছা করে, সে যেন এই দোয়া পড়ে। যদি সে মিলনে তাদের কপালে কোনো সন্তান লেখা থাকে, তবে সেই সন্তানকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না।”
(সহিহ বুখারি, মুসলিম)
হজরত আলি (রাঃ) বলেন,
“যে ব্যক্তি সহবাসের নিয়ত করে, তার উচিত হবে এই নিয়ত করা— ‘আমি ব্যভিচার থেকে বাঁচার জন্য ও নেককার সন্তান লাভের জন্য এটি করছি।’ এভাবে সহবাস করলে তা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে এবং এর দ্বারা নেক উদ্দেশ্য পূরণ হবে।”
সহবাসের পূর্বে করণীয় বিষয়সমূহ
স্বামী-স্ত্রী দুজনই পাক-পবিত্র থাকবেন।
বিসমিল্লাহ বলে সহবাস শুরু করা সুন্নত। ভুলে গেলে বীর্যপাতের আগেই মনে মনে পড়ে নিতে হবে।
সহবাসের আগে সুগন্ধি ব্যবহার করা রাসুল (সা.)-এর সুন্নত।
দুর্গন্ধযুক্ত খাবার (যেমন কাঁচা পেঁয়াজ-রসুন) থেকে বিরত থাকা উত্তম।
সহবাসকালীন কিছু নিষিদ্ধ বিষয়
কেবলামুখী হয়ে সহবাস করা উচিত নয়।
সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে সহবাস করা অনুচিত।
স্ত্রীকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি না দিয়ে সহবাস শেষ করা ঠিক নয়।
স্ত্রীর গোপনাঙ্গের দিকে তাকানো অনুচিত।
অতিরিক্ত কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকা উচিত।
খুব ভরা পেটে সহবাস করা ঠিক নয়।
প্রকৃতিগত বিরুদ্ধভাবে (পেছনের পথে) সহবাস সম্পূর্ণ হারাম।
যে সময়গুলোতে সহবাস থেকে বিরত থাকা উচিত
হায়েজ ও নেফাস (ঋতুকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়)
চন্দ্র মাসের ১ম ও ১৫তম রাত
ভ্রমণে বের হওয়ার আগের রাত
জোহরের পরপর সময়
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম
যদি কেউ অপবিত্র অবস্থায় থাকে (যেমন স্বপ্নদোষের পর), তাহলে গোসল না করে সহবাস করা অনুচিত।
সহবাসের সময় মনে মনে উল্লিখিত দোয়া পড়ে নেওয়া জরুরি, যাতে সম্ভাব্য সন্তান শয়তানের কুপ্রভাব থেকে নিরাপদ থাকে।
সহবাস শুধুমাত্র দাম্পত্য সম্পর্কের দৈহিক প্রয়োজনে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি নেক উদ্দেশ্যে করলে ইবাদতে পরিণত হয়। সঠিক নিয়ম মেনে সহবাস করলে আল্লাহর সন্তুষ্টিও অর্জিত হয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শয়তানের কুমন্ত্রণার হাত থেকে সুরক্ষিত থাকে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে নেক নিয়তে, সুন্নাত অনুযায়ী বৈধ সম্পর্ক বজায় রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।