নির্বাচনের দাবি জানালেন জামায়াত আমির

Spread the love

শনিবার (৩ মে ২০২৫) সকালে রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা ও মহানগরী আমির সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি দেশের আবহাওয়া ও পরিস্থিতি বিবেচনায় ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিল মাসকে নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় হিসেবে উল্লেখ করেন।

নির্বাচনের সময় নিয়ে মতামত

জামায়াত আমির বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে নির্বাচন হতে পারে। তবে সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া জনমনে আস্থা তৈরি না করলে সর্বোচ্চ এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। ফেব্রুয়ারি শেষ ও মার্চের বেশিরভাগ সময় রোজা থাকবে, যখন নির্বাচন সম্ভব নয়।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, সরকারের ঘোষিত সময়ের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম গতিশীল করা এবং অংশীজনদের সহযোগিতা নিশ্চিত করা গেলে নির্বাচন সম্ভব। তিনি প্রশ্ন তুলেন, “ফ্যাসিবাদের পতন হলো, নাকি ফ্যাসিবাদীদের পতন হলো? আমাদের দুঃখের ইতিহাসে এখনো ইতি টানতে পারিনি।”

অতীতের গণহত্যার সমালোচনা

ডা. শফিকুর রহমান ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের শাসনকালে দেশে শোষণ ও তাণ্ডবের অভিযোগ তুলেন। তিনি তিনটি গণহত্যার উল্লেখ করেন:

২০০৯ সালে পিলখানায় বিডিআর হেডকোয়ার্টারে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার হত্যা।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে রাতের অন্ধকারে হত্যাকাণ্ড।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ব্যাপক হতাহত।

    তিনি বলেন, এসব ঘটনায় অনেকে শহীদ ও পঙ্গু হয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে কালো অধ্যায়।

    ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি

    জামায়াত আমির জানান, ৫ আগস্টের পর দেশে কার্যত সরকারবিহীন অবস্থা ছিল। তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা আইন হাতে তুলে নিইনি। কোথাও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলেও আমরা নিরপেক্ষভাবে ব্যবস্থা নিয়েছি।”

    তিনি শহীদ পরিবার ও আহতদের পাশে থাকার চেষ্টার কথা উল্লেখ করেন। ফেনীর বন্যায়ও জামায়াত ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে বলে জানান তিনি।

    কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতি

    জামায়াত ইসলামী একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের ভোগান্তির সময়ে সবসময় সাড়া দেওয়া সম্ভব না হলেও তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জানান, আওয়ামী লীগের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জামায়াতের ভলান্টিয়াররা অমুসলিমদের বাড়িঘর, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষায় কাজ করেছেন। মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক ও অন্যান্য সংগঠনও এতে অংশ নিয়েছে।

    দায়ীদের শাস্তির দাবি

    ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “প্রায় সাড়ে ১৫ বছর ধরে যারা হত্যা, গণহত্যা, গুম, ধর্ষণ ও অর্থ পাচার করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাজ চালিয়ে যাবো।”

    তিনি বর্তমান সরকারকে জন-আকাঙ্ক্ষার সরকার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, জামায়াত সরকারকে সহযোগিতা করছে। তবে তিনি সরকারের কিছু উপদেষ্টার “অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ” থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।

    সম্মেলনের তাৎপর্য

    জামায়াত আমির জানান, ২০১১ সালের এপ্রিলের পর এটিই প্রথম এমন সম্মেলন, যেখানে তারা একত্রিত হয়েছেন। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ধৈর্য ও শান্তিপূর্ণ আচরণের জন্য ধন্যবাদ জানান।

    উপসংহার

    ডা. শফিকুর রহমান দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কার, নির্বাচন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন। তিনি জামায়াতের শান্তিপূর্ণ ভূমিকা এবং কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন, পাশাপাশি অতীতের অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানান।

    Check Also

    স্ত্রীর জানাজায় অঝোরে কাঁদলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী

    Spread the loveকৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকীর প্রথম …

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *